১৮.২.২১

‘জিরো ইক্যুইটি আবাসন ঋণ’- মুজিববর্ষে জনগণের দোড়গোড়ায় বিএইচবিএফসি

অরুন কুমার চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক(অতি. দায়িত্ব), বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন
অরুন কুমার চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতি. দায়িত্ব), বিএইচবিএফসি


স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ প্রতিষ্ঠান নানাবিধ উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বেঁচে থাকলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু হতেন শতবর্ষী; আবার ২০২১ সাল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্ধশতক সুবর্ণজয়ন্তী বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এই বহুমাত্রিক তাৎপর্যপূর্ণতায় ১৭ মার্চ ২০২০ হতে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ সময়কালকে মুজিববর্ষ  হিসেবে ঘোষণা করে এই প্রেক্ষাপটে মুজিববর্ষকে সামনে রেখে সরকারের সাথে আত্মীকৃত হয়ে বিএইচবিএফসিও গ্রহণ করে নানা পরিকল্পনা

১৯৫২ সাল হতে নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যা সমাধানকল্পে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক/ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশবলে প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠিত হয়ে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন (বিএইচবিএফসি) নামে অভিহিত হয় তখন হতে যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত বাংলাদেশ গড়ার অংশীদার হিসেবে গৃহায়ন খাতে একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঋণ সহায়তা প্রদান করে আসছে

রূপকল্প-২০২১ বর্ণিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঘোষিত 'সবার জন্য আবাসন' কর্মসূচি এবং সমন্বিত টেকসই জনবসতি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিএইচবিএফসিও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যার সমাধান, আবাদী জমি রক্ষা, সবুজ অর্থায়ন এবং গ্রামীণ পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামকে শহরে উন্নতীকরণে তার ঋণ কার্যক্রমকে ঢেলে সাজিয়েছে বাড়ানো হয়েছে ঋণের সিলিং, কমানো হয়েছে ঋণের সুদের হার ফলশ্রুতিতে যেখানে ঢাকা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিটিতে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে ঋণ বিতরণের হার ছিল ৭৯% এবং দেশের অন্যান্য গ্রামীণ অঞ্চলে ২১%, সেখানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ঢাকা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিটি বাদে দেশের অন্যান্য গ্রামীণ অঞ্চলে ৬৭% ঋণ বিতরণ করা হয়েছে


বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সবার জন্য আবাসন কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে “মুজিববর্ষের সম্ভাষণ - সবার জন্য আবাসন” এই শ্লোগান ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‌'সুখী সমৃদ্ধ-সোনার বাংলা' গড়ার প্রত্যয়ে সকল শ্রেণীর মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা বাড়ি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রকার ঋণের প্রোডাক্ট চালু, ঋণ সেবা সহজীকরণসহ দেশের নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যা সমাধান ও জীবনমান উন্নয়নকল্পে প্রবর্তন করে “জিরো ইক্যুইটি আবাসন ঋণ”। গ্রামীণ অবকাঠামোতে স্বাস্থ্যসম্মত, দূষণমুক্ত, নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার এবং পরিবেশবান্ধব উপকরণসমূহ বিশেষত: সৌর বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ও বৃক্ষশোভিত মডেলের বাড়ি তৈরিকে উদ্বুদ্ধ করে এই ঋণ প্রদান করা হয়।

মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বিএইচবিএফসি কর্তৃক জিরো ইক্যুইটিতে বাড়ি নির্মাণে ঋণ প্রদানের প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হয়। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যার সমাধান, আবাদী জমি রক্ষা এবং গ্রামীণ পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামকে শহরে উন্নতীকরণে এই ঋণ কার্যকর প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকা বাদে দেশের অন্যান্য এলাকায় বাড়ি নির্মাণের জন্য “জিরো ইক্যুইটি আবাসন ঋণ” প্রোডাক্ট চালু করা হয়। বিএইচবিএফসি কর্তৃক সরবরাহকৃত নির্দিষ্ট ডিজাইন অথবা গ্রাহকের নিজস্ব ডিজাইন মোতাবেক ৬০০-৯০০ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট একতলা বাড়ি নির্মাণে কৃষক আবাসন ঋণ ও পল্লীমা ঋণের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৭% ও ৮% সুদে সর্বোচ্চ ১৬.৫০ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে। এতে গ্রাহকের নিজস্ব বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। গ্রাহকের কমপক্ষে ৪ (চার) শতক নিষ্কন্টক জমি এবং ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধের ন্যূনতম সক্ষমতা থাকা সাপেক্ষে খুব সহজেই এই ঋণ পাওয়া যাবে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মানসম্মত ও দৃষ্টি-নন্দন আবাসন, পল্লী কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও নির্মাণ উপকরণ ব্যবসায় সম্প্রসারণ সর্বোপরি পল্লী অবকাঠামোর সার্বিক উন্নয়ন এবং শেকড়ের সন্ধানে পল্লী- বাস্তবায়নে এই ঋণ মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে, যা গ্রামীণ অর্থনীতি এবং দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বিএইচবিএফসি’র প্রয়াত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী মুজিববর্ষে সরকার ঘোষিত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনার সাথে বিএইচবিএফসি’কে সম্পৃক্ত করেছিলেন এই ঋণ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন নিয়ে। এই ঋণ প্রবর্তনে তিনি হাতে নিয়েছিলেন নানা উদ্যোগ। বিশেষত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন, পরিপত্র জারী, দ্রুত নথি প্রক্রিয়াকরণে নানাবিধ নির্দেশনা, প্রস্তাবনা ও বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়েছিলেন কার্যকরী পদক্ষেপ। মুজিববর্ষে বিএইচবিএফসি’কে জনগণের দোড়গোড়ায় সেবা প্রদানে বিস্তৃত করেছিলেন তিনি। আজ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর এই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন বিএইচবিএফসি’র সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। 

লেখকঃ

অরুন কুমার চৌধুরী,

ব্যবস্থাপনা পরিচালক(অতি. দায়িত্ব), 

বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন