১৪.১২.১৭

নতুন নেতৃত্ব, নতুন দিন : গৃহনির্মাণে নানা ঋণ

সাম্প্রতিক সময়ে বিএইচবিএফসিতে নতুন নীতিমালার আলোকে প্রবর্তিত হয়েছে আকর্ষণীয় নামে ৫ প্রকারের নতুন গৃহঋণ ব্যবস্থা। পরিবর্তিত আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে সময়োপযোগী এ পরিবর্তন ইতোমধ্যে সকল মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গত জানুয়ারি মাসে কর্পোরেশনে যোগদানকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী এসব ঋণ-প্রোডাক্ট প্রচলনের মূল স্বপ্নদ্রষ্টা এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক। একটি বিশেষায়িত সরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিএইচবিএফসি। এধরনের প্রতিষ্ঠানে এত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এতো ব্যাপক পরিবর্তন সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। ছয় দশকেরও বেশি বয়সী প্রতিষ্ঠানটির পুরানো খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে সময় লেগেছে মাত্র ছয় মাস। যুগোপযোগিতা অর্জনে বিএইচবিএফসি’র এ সাফল্য যুগান্তরকারী  এক ঘটনা।

দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী
 ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএইচবিএফসি

জনাব দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী’র  দায়িত্ব গ্রহণের বয়স তখন মাত্র ১৫ কর্মদিবস। এরই মধ্যে তিনি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মসূচী গ্রহণ করেন। গত ২১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ৩০ এপ্রিল এ কর্মসূচী শেষ হয়। ঋণ মঞ্জুরী, বিতরণ, আদায়, মামলা নিষ্পত্তিসহ দৈনন্দিন ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে বিশেষ এক গতি তরান্বিত করে এ কর্মসূচী। এ কর্মসূচীকে সফল করতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজেই ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন মাঠ-অফিস। অন্যান্য উর্ধ্বতন নির্বাহীবৃন্দেরাও মাঠ-পর্যায়ের অফিসসমূহ ঘুরে নতুন এক উদ্দীপনা সৃষ্টি করেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং নিজের সামর্থকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যয় সাফল্যমন্ডিত হয়।

মাঠ-পর্যায়ে চলছিল একশ দিনের কর্মসূচীর নতুন উদ্দীপনা আর সদর দফতরে চলছিল দিন বদলের মহাকর্মযজ্ঞ। এসময় কর্পোরেশনে প্রথমবারের মতো আইটেমভিত্তিক ঋণপ্রদান নীতিমালা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলে। অধিকাংশ অকার্যকর পুরানো ৭ আইটেমের ঋণ বদলে বাস্তব উপযোগিতাসম্পন্ন: নগরবন্ধু, পল্লীমা, প্রবাসবন্ধু, আবাসন উন্নয়ন ও আবাসন মেরামত ঋণ শীর্ষক নতুন নতুন সেবা-পণ্য(প্রোডাক্ট) চালু করা হয়। এসব প্রোডাক্ট-এ ঋণ প্রদানের বিধান সম্বলিত মোট ৬টি সার্কুলার জারী করা হয় গত ৬জুন তারিখে।

ইতোপূর্বে কর্পোরেশনের ঋণের সুদের হার সর্বশেষ পরিবর্তন হয়েছিল ১জুলাই ২০০৬ সালে। সেমতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্টো. এলাকায় ১২ শতাংশ এবং এদুটি এলাকার বাইরে সুদের হার ছিল বার্ষিক ১০ শতাংশ। জনাব দেবাশীষ চক্রবর্ত্তীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে কর্পোরেশনের ঋণের সুদের হার ১২ থেকে ৯.৫ এবং ১০ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ লক্ষ টাকা-কে অপর্যাপ্ত এবং সময়-অনুপযোগী বিবেচনায় তা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়। ঋণ-সীমা ঠিক দ্বিগুণ অর্থাৎ এক কোটি টাকায় উন্নীত করার মধ্যদিয়ে তার এ উদ্যোগটিও সাফল্যমন্ডিত হয়।
ঋণ বহুমুখীকরণের মাধ্যমে এখন তা সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। পোঁছে দেয়া হয়েছে পল্লী এলাকা পর্যন্ত। প্রতিষ্ঠানটির এ ঋণ পুনর্গঠন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সময় আবাদি জমি রক্ষা, কমিউনিটি আবাসন, বর্তমান সময়ের অর্থ, নির্মাণসামগ্রী ও শ্রম বাজার বিবেচনা করা হয়। বিবেচনা করা হয়েছে পল্লী এবং প্রবাসী নাগরিকের চাহিদার কথাও।

বর্তমানে প্রচলিত ঋণ-প্রোডাক্টসমূহের উপর আইটেম-ভিত্তিক  সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ
⌸ নগরবন্ধুঃ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্টো.এলাকা এবং এদুটি এলাকার বাইরে দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলাসদর এলাকায় প্রদেয় এঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ  কোটি টাকা। সুদের হার সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় শতাংশ। গ্রুপভিত্তিতে নির্মাণাধীন স্থাপনায় দেয়া যাবে সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ টাকা। এলাকাভেদে ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৮০ লক্ষ টাকা। সুদের হার সর্বত্রই সমান; শতকরা বার্ষিক ১০ টাকা।
⌸ প্রবাসবন্ধুঃ দেশের অভ্যন্তরে সকল নাগরিক সুবিধা সম্বলিত বাড়ি নির্মান উপযোগী যে কোনও জমি এ ঋণে নেয়া যাবে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইটালী, সিংগাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকগণ এ ঋণ নিতে পারবেন। অযৌথ বা একক গৃহ নির্মানে এলাকা ভেদে সুদের হার হবে ৮.৫০ থেকে ৯.৫০ শতাংশ। সর্বোচ্চ ঋণ পাওয়া যাবে ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি  টাকা। যৌথ বা গ্রুপভিত্তিক গৃহ নির্মানে সিলিং ৪০ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ টাকা। সুদের হার একই। প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য এলাকাভেদে প্রদেয় ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং ৪০ লক্ষ টাকা থেকে ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এ ক্ষেত্রে পেরি-আরবান, উপজেলা সদর ও গ্রোথ-সেন্টার এলাকায় সুদের হার ৯ শতাংশ এবং এসব এলাকার বাইরে ১০ শতাংশ।

⌸ পল্লীমাঃ দেশের সকল পেরি-আরবান এলাকা, উপজেলা সদর এবং গ্রোথ সেন্টার বা বর্ধিষ্ণু অঞ্চলে এ ঋণ দেয়া হচ্ছে। ধরণ ও প্রকৃতি অনুযায়ী এ ঋণ হতে পারে ৩ রকমের। অযৌথ বা একক বাড়ি নির্মাণের জন্য ৮.৫% সুদে এ ঋণ হতে পারে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এসব এলাকায় যৌথ উদ্যোগে গ্রুপঋণ নেয়া হলে ৮.৫% সুদে প্রতি গ্রাহক পেতে পারেন সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি এসব এলাকার বার্ষিক ৯ শতাংশ হার সুদে ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য পেতে পারেন সর্বোচ্চ ৪০ লক্ষ টাকা।

⌸ আবাসন উন্নয়ন ঋণঃ একক মালিকানাধীন গৃহ-স্থাপনার বর্ধিতাংশ নির্মানে এ ঋণ পাওয়া যাবে। পেরি-আরবান, উপজেলা সদর এবং গ্রোথ-সেন্টার এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্টো. এলাকার বাইরে বিভাগীয় ও জেলা সদরে সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্টো. এলাকায় এ ঋণের সর্বোচ্চ পরিমান ১ কোটি টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্টো. এলাকায় সুদের হার বার্ষিক শতকরা সাড়ে নয় টাকা। এদুটি মেট্টো.এলাকার বাইরে সুদের হার সাড়ে আট শতাংশ।

⌸ আবাসন মেরামত ঋণঃ  ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্টো. এলাকা এবং দেশের সকল বিভাগীয় ও জেলা সদর এলাকায় গৃহ-স্থাপনা সংস্কার ও মেরামতের জন্য এঋণ নেয়া যাবে। এলাকাভেদে এবাবদ সর্বোচ্চ ২০ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার ঋণ নেয়া যাবে। বার্ষিক সুদের হার সাড়ে আট থেকে সাড়ে নয় শতাংশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন